Unknown
গত ছমাস থেকে এক বছরের মধ্যে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার স্টার্ট আপেদের সংখ্যা অনেক গুন বেড়েছে। বোঝাবার জন্য বলে রাখা ভাল, ফুড ডেলিভারি কোম্পানিগুলি আসলে কি করে। তারা তাদের সিস্টেমে কাস্টমারের অর্ডার নেয় ,তারপর সেটা একটা খাবার তৈরীর সংস্হা বা রেস্টুরেন্টে সেই অর্ডার পাঠিয়ে দেয়। পরে সেই রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে কাস্টমারের কাছে পাঠাবার জন্য একজন ডেলিভারি বয়কে পাঠায়।যদিও গ্রাহকের স্বাচ্ছন্দ্যই ফুড ডেলিভারি স্টার্ট আপের মূল লক্ষ্য হলেও দূর্ভাগ্য এটাই তারা খাবারের গুনমান নিয়ন্ত্রণের কোনওরকম কাজ করেনা।

এক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, রেস্টুরেন্ট থেকে প্রতি অর্ডারে খাবার পাঠানোর যা খরচ এই স্টার্ট আপ গুলি তার চাইতে বেশী আয় করতে পারে কিনা।দেখা যাচ্ছে অনেক স্টার্ট আপই অর্ডার ডেলিভারি করে যে টাকা পায় তার চাইতে প্রায় তিনগুন টাকা খরচ করছে ।তারা পুরোটাই ক্ষতির মধ্যে আছে।

আশা একটাই ভবিষ্যতে ডেলিভারি ফোর্স আরো দক্ষ হবে,আর এমন একটা সময় আসবে যখন খাবার ডেলিভারির অর্ডারপ্রতি আয় অর্ডার ডেলিভারির খরচের চাইতে বেশী হবে।সেইসময় ব্যবসায় প্রচুর লাভের মুখ দেখা যাবে।প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন ব্যাবসায় এই যুক্তিই ব্যবহার করা হচ্ছে।


কিন্তু এখন বাস্তবে এটা করে দেখানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্যান্য প্রযুক্তি নির্ভর গ্রাহক পরিষেবার মতই ,খাবার ডেলিভারির স্টার্ট আপ গুলিকেও অজানা লোকেশন থেকে অর্ডার পাওয়া আর ডেলিভারি দেওয়ার

চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এছারাও ব্যবসার পরিবেশের শর্তগুলিকে প্রভাবিত করতে না পারার অক্ষমতা।এছারাও বাহ্যিক বিষয়গুলির

উপর নিয়ন্ত্রণের অভাবও এর জন্য দায়ী।যেমন ক্যাব ডেলিভারি কোম্পানীগুলির ক্ষেত্রে রাস্তাঘাটের অবস্হা দায়ী বা মুদিদোকানের মালের ডেলিভারির ক্ষেত্রে এস কে ইউ(SKUS ) এর সহজলভ্যতা দায়ী আর খাবার ডেলিভারির ব্যবসার ক্ষেত্রে কত তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্টে খাবার তৈরী হল তা গুরুত্বপূর্ণ ।

কোম্পানী গুলি ছোট ছোট এলাকায় ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়ে এই সমস্যা কাটাবার চেস্টা করছে। সেকারনে আপনি যেখান থেকে খাবার অর্ডার দিচ্ছেন তার খুব কম দুরত্বের দোকান থেকে খাবারের ডেলিভারি হচ্ছে। এভাবেই খাবারের অর্ডার আর খাবারের দোকানের মধ্যে দুরত্ব কমান হচ্ছে।গ্রসারি বা ওষুধের ক্ষেত্রে এই স্ট্রাটেজিই কাজে লাগান হচ্ছে।খাবার ডেলিভারির স্টার্ট আপ গুলির ক্ষেত্রে আরও দুটি অতিরিক্ত সমস্যা রয়েছে যেগুলি ট্যাক্সি বা ওষুধ ডেলিভারির ক্ষেত্রে নেই।


বেশীরভাগ গ্রাহকই অর্ডার দেওয়ার ঘন্টা চারেকের মধ্যেই তাদের অর্ডার দেওয়া খাবার ডেলিভারি চান( যাতে খাবার না ঠান্ডা হয়ে যায়) কিন্তু ট্যাক্সি ,গ্রসারি বা ওষুধের ক্ষেত্রে তা হয়না।তাদের ক্ষেত্রে সময়ের সীমা টা আরও অনেক বেশী।

খাবার তৈরীর এক ঘন্টা পর যদি খাবারের ডেলিভারি হয় তাহলে তা ঠান্ডা হয়ে যায় খাবারের স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়। আমরা ভারতীয়রা তা একদমই পছন্দ করি না।গ্রসারি আর ওষুধ কখনই ঘন্টা কয়েক পরে নষ্ট হয়ে যায় না।যত চেষ্টাই করা হোক না কেন এই বাধা গুলি কাটানো সম্ভব নয়।আর এর থেকে এটা পরিষ্কার যে দিনে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক অর্ডার ডেলিভারির বেশী ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব নয়।সেকারণেই খাবার ডেলিভারির ব্যবসায় সহজে টাকা কামানো সম্ভব নয়। যত সংখ্যক অর্ডারই আসুক না কেন, অর্ডারের সংখ্যাটা আগে থেকেই নির্দিষ্ট হয়ে থাকবে।

তাহলে এই সব স্টার্ট আপ গুলোর ভবিষ্যত কি

সত্যি বলতে শুধু খাবার ডেলিভারির স্টার্ট আপগুলি টিকে থাকার পিছনে কোনও যুক্তি নেই। তবে খাবার ডেলিভারির গ্রসারি ডেলিভারির স্টার্ট আপ গুলির দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।মনে রাখবেন গ্রাহকেরা সবসময় দিনের শেষে গ্রসারির জিনিসপত্র চান আর খাবার দিনের মাঝামাঝি।

সেকারণেই আমরা খুব শীঘ্রই দেখব গ্রসারি ডেলিভারির স্টার্ট আপগুলো তাদের পরিষেবার মধ্যে খাবার ডেলিভারির ব্যবসায় ঢুকবে।এর ফলে খাবার ডেলিভারির স্টার্ট আপ গুলির শেষের দিন আরও ঘনিয়ে আসবে |
Unknown
কর্ণাটকের অখ্যাত গ্রাম দোদ্দাবল্লাপুরের হালিনাহালি। গুগলে সার্চ করলে এই অখ্যাত জায়গার মধ্যে যে নামটা জ্বলজ্বল করে, সেটা অমরুথা ডেয়ারি ফার্ম। এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর তৈরি ডেয়ারি ফার্মটির সুবাদেই অখ্যাত হালিনাহালি আজ এক পরিচিত নাম। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। আইটি কর্মীর হাতে গড়া ডেয়ারি। অবাস্তব শোনালেও তেমনটাই করে দেখিয়েছেন সন্তোষ ডি সিং।


ছিলেন ডেল, আমেরিকা অনলাইনের মতো মার্কিন সংস্থার কর্মী। একটা সময়ে সেই কাজের সুবাদেই ঘুরে বেরিয়েছেন দেশে-বিদেশে। আর এই ঘুরে বেরানোর সুযোগটাই তাঁর সামনে একটা নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। প্রকৃতি প্রেমী সন্তোষের মনে হতে থাকে ১০টা-৫টার জীবন তাঁর জন্য নয়। বরং তিনি এমন কিছু করবেন যা তাঁকে গোটা সপ্তাহ জুড়ে প্রকৃতির কাছে থাকার সুযোগ করে দেবে।


স্নাতকোত্তর শেষে করে প্রায় এক দশক তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করার পর কাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন সন্তোষ। মনস্থ করেন, খুলবেন ডেয়ারি ফার্ম। পশু পালন বা খামার নিয়ে নিতান্তই অজ্ঞ হলেও চাকরিজীবনে রপ্ত করা ব্যবস্থাপনা ও নানা ব্যবসায়িক কৌশল নিজের নয়া উদ্যোগে প্রয়োগ করেন সন্তোষ। আর পশুপালনের প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তি হন ন্যাশানাল ডেয়ারি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। মোটা বেতনের চাকরি ছাড়ার মধ্যে ঝুঁকি ছিল। কিন্তু NDRI তে হাতেকলমে পশুপালনের ক্লাস করে ডেয়ারি ফার্মিং নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করেন তিনি।

৩টে গরু ও ৩ একর জমি

পঠনপাঠন তো হল এবার সেই জ্ঞান কাজে লাগানোর পালা। সপ্তাহান্তে শহর থেকে দূরে পালাবেন বলে যে জায়গা বেছে রেখেছিলেন সন্তোষ সিং, সেটাই হয়ে উঠল তাঁর ঘরবাড়ি। ৩ একরের সেই জমিতে ৩টে গরু নিয়ে শুরু হয় অমরুথা ডেয়ারি ফার্ম। গরুদের লালনপালন থেকে থামার পরিস্কার রাখা – সবটাই সন্তোষ করতেন নিজের হাতে।


প্রাথমিকভাবে সন্তোষ ভেবেছিলেন প্রথম বছরটা খান ২০ গরু নিয়ে ব্যবসা চালাবেন। সেইমতো পরিকাঠামোও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আমূল বদলে যায় NABARD-এর সৌজন্যে। “NDRI-র এক প্রশিক্ষক একদিন আমার ফার্ম দেখতে এলেন। প্রযুক্তিগত সাহায্যের জন্য তিনিই নাবার্ড-এর দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন”, জানিয়েছেন সন্তোষ। নাবার্ডের সঙ্গে কথা বলে সন্তোষ অনুভব করেন, নিজের ফার্মের পরিকাঠামোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে গেলে গরুর সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করতে হবে। যাতে দিনে ১৫০০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। তবেই বার্ষিক ১ কোটি টাকার ব্যবসা সম্ভব। এরইমধ্যে নাবার্ড সন্তোষ সিং-কে রুপোর পদক দিয়ে সম্মানিত করে দুধ উৎপাদনে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। নতুন লক্ষ্যে এগোনোর পথে এই রৌপ্য পদক সন্তোষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল অনেকটাই। তারওপর লক্ষ্যপূরণে আর্থিক সাহায্য দিতে এগিয়ে আসে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ মাইসোর।

নতুন করে শুরু

কিন্তু যেকোনও ব্যবসার মতই সন্তোষকেও খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। একবার টানা ১৮ মাসের খরায় খরার ফার্মের গবাদি পশুদের জন্য খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল সন্তোষকে। এক লাফে খড়-বিচুলির দাম বেড়ে যায় ১০ গুণ। প্রভাব পড়ে উৎপাদনে। নিজের জমানো টাকা খরচ করে কোনওমতে সামাল দিয়েছিলেন সন্তোষ সিং। কিন্তু এই পরিস্থিতি যে আবার উদয় হবে না, তার কোনও গ্যারান্টি ছিল না। অগত্যা নতুন পথের খোঁজ। জলের মধ্যে চাষ করার ব্যবস্থা গড়ে তুললেন সন্তোষ, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যাকে বলে হাইড্রোপনিক্স। যেখানে গবাদি পশুদের জন্য দিনে প্রায় ১ টন খাবার উৎপাদন হয়।


১৮মাস খরা পর আবার বর্ষণ সন্তোষের সব ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছিল। সন্তোষ এখন আর খরা নিয়েও খুব বেশি চিন্তিত নন। খরা হলেও তা মোকাবিলা করার পরিকাঠামো তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। ব্যবসায়িক উত্থান-পতনের এই অভিজ্ঞতা নতুন উদ্যোগপতিদের সঙ্গে ভাগ করতে চান সন্তোষ সিং। তাঁর কথায়, “যখন সবাই খরার সময় ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে বা অন্য লাভজনক ব্যবসায় চলে গেছে তখন আমি ভাল সময় আসার অপেক্ষা করেছি। ধৈর্য্য ধরার ফল পেয়েছি”‌। নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে এগিয়ে গেলে সাফল্য মিলতে বাধ্য!
Unknown
খুবই শোচনীয় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন এক সময়ের নামি নৃত্যশিল্পী তারা বালগোপাল। ৮২ বছর বয়স্ক এই শিল্পীর দুরবস্থার কথা শুনে খারাপ লাগে নিখিল সারুপের। নৃত্যশিল্পীর পাশে দাঁড়াতে উঠেপড়ে লাগলেন একটি লিগ্যাল স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা নিখিল। ক্রাউড ফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম Ketto-র মাধ্যমে একটা ক্যাম্পেনও শুরু করে দেন। ফল মিলল হাতেনাতে। দু'দিনের মধ্যে উঠে এল তিন লক্ষ টাকা। আর যখন ক্যাম্পেন শেষ হল সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ দাঁড়াল আট লাখ টাকারও বেশি। বালগোপালের পাশে দাঁড়িয়েছেন চারশোরও বেশি মানুষ। সবাই হাত বাড়ালে কী হয় এটা তারই একটা নমুনা।


ক্রাউড ফান্ডিং (জনগণের থেকে সংগৃহীত অর্থ) বিষয়টা ভারতে নতুন কিছু নয়। ধীরুভাই আম্বানির ক্ষুদ্র উদ্যোগে পাড়া-প্রতিবেশীদের অর্থের যোগান কিংবা মন্দির তৈরিতে সম্মিলিত দান, চাঁদা, হরদম দেখতে পাই। জনগণের টাকায় এরকম বহু কাজ হয়। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শতাব্দী প্রাচীন সেই কনসেপ্টকেই এখন নতুন রূপ দিয়েছে Ketto, BitGiving কিংবা Wishberry -র মতো স্টার্টআপ।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে ত্রাণের কাজ, আন্ত্রেপ্রেনারশিপ, শিল্প-সাহিত্য, পরিবেশগত বিষয়, স্কুল-কলেজ তৈরি। কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে কোনও ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো। এরকম বহু ক্ষেত্রে এখন সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে ক্রাউড ফান্ডিং। রাস্তার পশুপাখিদের নিয়ে কাজ করা দিল্লির সংস্থা Friendicoes একটা সময় উঠে যেতে বসেছিল। সে কথা কানে যেতেই এগিয়ে আসেন পশুপ্রেমীরা। BitGiving স্টার্টআপের মাধ্যমে তাঁরা তুলে দেন ৬০ লক্ষ টাকা। যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় তিনগুণ। BitGiving-এর সহ-প্রতিষ্ঠাত্রী ইশিতা আনন্দ বললেন,"জনগণ নিজেরাই এগিয়ে এসে জানাচ্ছেন তাঁরা কী চান, মানুষ কী চাইছে। বিদেশে দেখা যায় খেলাধুলা, প্রযুক্তিগত বিষয়ে জনগণ বেশি আগ্রহী। আমাদের দেশে সেটা বেশি দেখা যায় খেলাধুলা সংক্রান্ত বিষয়ে।" এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ

নেওয়ার জন্য ভারতের জাতীয় হকি দলকে পাঁচ লক্ষের বেশি টাকা তুলে দিতে পেরেছিল বিটগিভিং। আবার পর্বতারোহী অঞ্জুম জামশেনপা যাতে চতুর্থবার মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে পারেন এবং নিজের রেকর্ড ভাঙতে পারেন, সেজন্য তাঁকে ২৪ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিল Catapooolt.

ফেলে আসা বছরে (২০১৫) এ রকমই বহু সহায়তা প্রদানকারী মানুষের সাক্ষী হয়েছে দেশ।Wishberry-র সহ-প্রতিষ্ঠাত্রী অংশুলিকা দুবে জানালেন, "শিল্পকলা-সাহিত্য বরাবরই পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভরশীল। এখন সেই সাহায্যের হাতের সঙ্গে মিশেছে প্রযুক্তি। এর দরকারও রয়েছে। অডিয়েন্সের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলতে শিল্পীদের এর প্রয়োজন রয়েছে।" হাতেগরম উদাহরণও রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় অ্যানিমেশন ফিল্ম 'পুণ্যাকোতি' (Punyakoti) তৈরির জন্য উইশবেরিকে ৩০০ জন মিলে তুলে দেন ৪২ লক্ষ টাকা। এখনও পর্যন্ত আড়াইশোরও বেশি প্রজেক্টে ৭ কোটি টাকা তুলে দিতে পেরেছে WishBerry. এত টাকা দিলেন কারা?দিয়েছেন ১৫ হাজারের মতো সাধারণ মানুষ। ভরসা এতটাই যে আগামীদিনে আঞ্চলিক ভাষাতেও এ ভাবে টাকা নিয়ে এগিয়ে আসতে চায় অংশুলিকার সংস্থা।

এই প্রবণতা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। Spark Capital (একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং ফার্ম)-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তথা হেড কে. রামকৃষ্ণণ বললেন, "স্টার্টআপের বিষয়টা ক্রমেই জনমানসে ছড়িয়ে পড়ছে। তরুণ সমাজ নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার কথা ভাবছে। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে তরুণ উদ্যোগীরা যদি পুঁজি বা ক্যাপিটালের যোগান পায়, সেক্ষেত্রে তারা সহজেই তাদের আইডিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।"

বহু সংস্থার পাশে দাঁড়িয়েছে সতীশ কাটারিয়ার স্টার্টআপ Catapooolt. সতীশের কথায়, "আমাদের এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কিছু ইউনিক আইডিয়াকে বাস্তব রূপ দিতে পেরেছি। যেমন ধরুন Greensoles. এই সংস্থা স্পোর্টস স্যু'র চামড়া দিয়ে স্লিপারস বানায়। আমরা একে ২ লক্ষ টাকা তুলে দিতে পেরেছি। স্টার্টআপগুলো এখন আর লগ্নিকারীদের দয়ার পাত্র নয়।" মাত্র দু'বছরে ১৪ হাজার কনট্রিবিউটরের থেকে ২০ কোটি টাকা তুলতে পেরেছে সতীশের সংস্থা।

চেন্নাইয়ে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার কথাই ধরুন। প্রাকৃতিক রোষের মুখে মানুষ তখন অসহায়। ত্রাণের কাজে বেশ কয়েকটি ক্যাম্পেন চালায় Ketto. যা থেকে উঠে আসে এক কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। ২০১২ সালে এই সংস্থা গড়ে তোলেন বরুণ শেঠ, কুণাল কাপুর এবং জাহির আদেনওয়ালা। জন্মলগ্ন থেকে চার হাজারের বেশি ক্যাম্পেন চালিয়েছে সংস্থা। যা থেকে উঠে এসেছে ১০ কোটির বেশি টাকা। সংস্থার বেশ কয়েকটি ক্যাম্পেনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে বলিউড অভিনেতা হৃতিক রোশন, অভিষেক বচ্চনদের। তারকাদের এই উপস্থিতির ফলে দুটো লাভ হয় বলে মনে করেন জাহির। প্রথমত, সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। এবং দ্বিতীয়ত, আরও বেশি-বেশি মানুষ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। Ketto-র ঝুলিতে রয়েছে এমন বহু উদাহরণ। মুম্বইয়ে এক তরুণীর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য ১০ লক্ষের বেশি টাকা তুলে দিতে পেরেছিল সংস্থা। আবার কলকাতায় জটিল রোগে আক্রান্ত একটি মেয়ের পুনর্বাসনের জন্যও একই পরিমাণ টাকা দিয়েছিল। যা সবই জনগণের আশীর্বাদের টাকায়।

(লেখা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বিশেষজ্ঞ রাজ দুলাল মুখোপাধ্যায়
Unknown
মাত্র ১৬ টাকা পুঁজি নিয়ে ১৩ বছর বয়সে গলায় ঝুড়ি ঝুলিয়ে কমলালেবুর ফেরিওয়ালা হিসেবে ব্যবসা শুরু। এরপর ১৯৫২ সালে বিড়ির ব্যবসার মধ্য দিয়ে ব্যবসার গতি-প্রকৃতি একেবারে জাদুর মতো বদলে যেতে থাকে। পরবর্তী সময়ে যে ব্যবসায় হাত দিয়েছেন, সেখানেই সাফল্য পেয়েছেন তিনি। একে একে তিনি দেশের উল্লেখযোগ্য ২৩টি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসার জাদুকরে পরিণত হন।

এতক্ষণ বলছিলাম আকিজ গ্রুপ ও আদ্-দ্বীনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দীন জীবনের গল্প।

খুলনার ফুলতলা থানার মধ্যডাঙ্গা গ্রামে ১৯২৯ সালে জন্ম নেন শেখ আকিজ উদ্দীন। শৈশব কেটেছে কঠিন দারিদ্র্যের মধ্যে। স্বপ্ন দেখতেন দারিদ্র্য জয় করে একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন। কিন্তু জীবনসংগ্রামের শুরুতে পদে পদে বাধার মুখে পড়েন। সেই বাধা পেরোতে শেখ আকিজ উদ্দীনের সম্বল ছিল সাহস, সততা আর কঠোর পরিশ্রম। এই তিনটি জিনিসকে পুঁজি করেই শুরু হয় উদ্যোক্তা আকিজ উদ্দীনের উত্থান পর্ব।

তিনি দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে লাখো মানুষের নিয়োগকর্তা হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখান। কিভাবে শুরু হলো তার উত্থান।

ব্যবসা শুরুর পদে পদে বাধা : আকিজ উদ্দীনের বাবা শেখ মফিজ উদ্দিন ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসয়ী। তিনি খুলনার ফুলতলা থানার মধ্যডাঙ্গা গ্রামে ফল ও ফসলের মৌসুমি ব্যবসা করতেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মা-বাবার একমাত্র সন্তান হয়েও আকিজ লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। তিনি খুব কাছ থেকে দারিদ্র্য দেখেছেন। আর গভীরভাবে বাবার ব্যবসা পর্যবেক্ষণ করেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু স্বপ্নের কোনো কিনারা করতে না পেরে ১৯৪২ সালে মাত্র ১৬ টাকা হাতে নিয়ে জীবিকার সন্ধানে কিশোর শেখ আকিজ উদ্দিন খুলনার মধ্যডাঙ্গা গ্রাম থেকে বের হন। ট্রেনে চেপে তিনি কলকাতায় যান। কলকাতার শিয়ালদহ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তিনি রাত কাটাতেন। ওখানেই পাইকারি বাজার থেকে কমলালেবু কিনে ফেরি করে বিক্রি করেছেন। কিছু দিন কমলালেবুর ব্যবসা করার পর তিনি একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান দেন। কিন্তু একদিন পুলিশ অবৈধভাবে দোকান দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। কয়েক দিন জেল খেটে মুক্ত হয়ে আকিজ উদ্দিন উদ্ভ্রান্তের মতো কলকাতা শহর ঘুরেছেন। কলকাতায় তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানের পেশোয়ারের এক ফল ব্যবসায়ীর পরিচয় হয়। আকিজ ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে পেশোয়ারে গিয়ে ফলের ব্যবসা শুরু করেন। দুই বছর ব্যবসা করে তাঁর পুঁজি দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আকিজ বাড়ি ফিরে আসেন।

উত্থানের গল্প : ১৯৫২ সালের দিকে বন্ধুর বাবা বিড়ি ব্যবসায়ী বিধু ভূষণের সহযোগিতায় আকিজ উদ্দিন বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি গ্রামগঞ্জ ঘুরে ধান, পাট, নারকিল ও সুপারি কিনে আড়তে আড়তে বিক্রি করেছেন। সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে বাড়ির পাশে বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের কাছে একটি দোকান দেন। কিন্তু দোকানটি আগুনে পুড়ে যায়। আকিজ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি এলাকাবাসীর সহায়তায় ফের দোকান দেন। পাশাপাশি শুরু করেন ধান, পাট, চাল ও ডালের ব্যবসা। এরপর তিনি সুপারির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। রাত জেগে সেই সুপারি ছিলে দিতেন তাঁর সহধর্মিণী। এই সুপারি তিনি কলকাতায় পাঠাতেন। সুপারির ব্যবসায় তাঁর বেশ লাভ হয়। এরপর তিনি বিধু বিড়ির মালিক বিধু ভূষণের পরামর্শে বিড়ির ব্যবসায় যুক্ত হন। নাভারণের নামকরা ব্যবসায়ী মুজাহার বিশ্বাসের সহায়তায় তিনি ছোট্ট একটি বিড়ি তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন। শুরু হয় আকিজের উত্থান পর্ব।

বিড়ি ফ্যাক্টরির পর ১৯৬০ সালে অভয়নগরে অত্যাধুনিক চামড়ার কারখানা এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ১৯৬৬ সালে ঢাকা টোব্যাকো, ১৯৭৪ সালে আকিজ প্রিন্টিং, ১৯৮০ সালে আকিজ ট্রান্সপোর্ট, নাভারণ প্রিন্টিং, ১৯৮৬ সালে জেস ফার্মাসিউটিক্যাল, ১৯৯২ সালে আকিজ ম্যাচ, ১৯৯৪ সালে আকিজ জুট মিল, ১৯৯৫ সালে আকিজ সিমেন্ট, আকিজ টেক্সটাইল, ১৯৯৬ সালে আকিজ পার্টিকেল, ১৯৯৭ সালে আকিজ হাউজিং, ১৯৯৮ সালে সাভার ইন্ডাস্ট্রিজ, ২০০০ সালে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, একই বছর আকিজ অনলাইন, নেবুলা ইন্ক, ২০০১ সালে আকিজ করপোরেশন, আকিজ কম্পিউটার, আকিজ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড টেকনোলজি, ২০০৪ সালে আফিল এগ্রো, ২০০৫ সালে আফিল পেপার মিলস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেখ আকিজ উদ্দিন অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ ছাড়া তিনি আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর মৃত্যুর পর সন্তানরা আরো অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

আকিজ উদ্দিনের ১৫টি সন্তান। ১০ ছেলে পাঁচ মেয়ে। বড় ছেলে ডাক্তার শেখ মহিউদ্দিন আদ্-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালক ও আকিজ বিড়ির চেয়ারম্যান, অন্য সন্তানদের মধ্যে শেখ মোমিন উদ্দিন এসএএফ চামড়া ফ্যাক্টরির এমডি, শেখ আফিল উদ্দিন সংসদ সদস্য ও আফিল গ্রুপের এমডি, শেখ বশির উদ্দিন আকিজ গ্রুপের এমডি। এ ছাড়া শেখ নাসির উদ্দিন, শেখ আমিন উদ্দিন, জামিন উদ্দিন, শেখ আজিজ উদ্দিন, শেখ জামিল উদ্দিন সবাই আকিজ গ্রুপের সঙ্গে জড়িত।

বাবার স্মৃতিচারণা করে ডাক্তার শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবা আমাদের বলতেন, আগুন হয়তো মনের শক্তি দিয়ে হাতে চেপে রাখা যায়। কিন্তু ক্ষমতা ও সম্পদ ধরে রাখা তার চেয়ে আরো অনেক কঠিন। বাবার এই বাণী ধারণ করে তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সমাজসেবার হাল ধরে রেখেছি।’

শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘বাবার নামাজ-কালামের পরই ছিল ফিন্যানশিয়াল ডিসিপ্লিনের স্থান। এ ছাড়া তাঁর সময়জ্ঞান ছিল উল্লেখ করার মতো। তিনি কোনো মিটিংয়ে এক মিনিট পরে আসেননি। আমি তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুটি অনুসরণ করে লাভবান হয়েছি।’

শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, ‘বাবার মধ্যে কোনো আত্ম-অহমিকাবোধ ছিল না। তিনি সব কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। তাঁর দূরদর্শিতার কারণেই আকিজ গ্রুপ সমপ্রসারিত হয়েছে।’

শেখ মোমিন উদ্দিন বললেন, ‘বাবার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না। কিন্তু তাঁর শিক্ষার প্রতি প্রেম ছিল। তিনি আমাদের উচ্চশিক্ষা দিয়ে ব্যবসার পাসপোর্ট দিতেন। তাঁর সততা, ধৈর্যশীলতা, মেধা, সহনশীলতার কারণেই আকিজ গ্রুপ সাফল্যের শিখরে উঠেছে।’

মধ্যডাঙ্গা গ্রামের শেখ আকিজ উদ্দিনের নিকটতম প্রতিবেশী আলী আকবর বলেন, ‘আকিজ উদ্দিনের সংসারে সব সময় অভাব লেগেই থাকত। আকিজ বাড়িতে থাকতেন না, মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন। তিনি এসে স্ত্রী সকিনা খাতুনকে সংসার চালানোর জন্য কিছু টাকা দিতেন। কিন্তু তাতে সংসার ১৫ দিনও চলত না। আকিজ উদ্দিন বাড়িতে এলে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ধার শোধ করতেন।’

তিনি বলেন, ‘আকিজ উদ্দিন আমাদের বলতেন, কারো কোনো দেনা রাখব না। আমি রাতদিন ব্যবসার পেছনে ছুটছি। আল্লাহ আমাকে লাভ দেবেন। সেই লাভের টাকা দিয়ে তোমাদের দেনা শোধ করে দেব।’

আকিজ উদ্দিন ২০০৬ সালে মারা যান। তার রেখে যাওয়া ব্যবসা ও আদর্শ এখনো তার স্ত্রী-সন্তানেরা ধরে রেখেছেন
Unknown
ধৃতরাষ্ট্রকে আমরা সবাই চিনি। জন্ম থেকে অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও পাণ্ডুর অবর্তমানে রাজা হয়েছিল সেই। কিন্তু আমরা আজ শুনব এমন একজনের গল্প, যে হয়তো আজকের যুগে দাঁড়িয়ে ছাপিয়ে গেছে ধৃতরাষ্ট্রকেও। হায়দ্রাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে শ্রীকান্ত বোলা। চাষ আবাদ করেই সংসার চালায় গরীব বাবা। কিন্তু গরীব হওয়ার থেকেও বড় অভিশাপ আছে শ্রীকান্তের জীবনে। জন্ম থেকেই সে দুচোখে দেখতে পায়না। প্রচলিত গ্রাম্য ধারণা থেকে সবাই ওর বাবা মাকে বলেছিল এই ছেলে সংসারের জন্য পাপ, একে ছোটবেলাতেই মেরে ফেললে, এই পাপ বহন করতে হবে না, কেউ বলেছিল দৃষ্টিহীন মানুষের কোন মূল্যই নেই এই সমাজে। কিন্তু বাবা-মায়ের মন বলে কথা, নিজের ঔরস থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান কে মেরে ফেলার কথা ভাবা যায় নাকি?

আজ প্রায় তেইশ বছর বাদে শ্রীকান্ত নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছে আর ভুল প্রমাণ করেছে তাঁর প্রতিবেশীদের। আজ যদি কেউ তাঁর দিকে তাকিয়ে বলে ‘শ্রীকান্ত তুমি কোনকিছুর উপযুক্ত নও, সেও পাল্টা বলার ক্ষমতা রাখে, যে এমন কিছু এই পৃথিবীতে নেই, যা সে পারেনা’। আর এটা তাঁর নিজের প্রতি বিশ্বাস।
হায়দ্রাবাদের বোলান্ত ইন্ডাস্ট্রির সি.ই.ও আর প্রতিষ্ঠাতা হল শ্রীকান্ত। লেখাপড়া না জানা বা কোনভাবে প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়েই এই প্রতিষ্ঠান চালায় সে। ইকো-ফ্রেন্ডলি বিভিন্ন রকম প্রোডাক্ট তৈরি করে তারা। কিন্তু চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো বিষয়টা হল এই কোম্পানি এখন ৫০ কোটির সাম্রাজ্য। আর এখানেই ধৃতরাষ্ট্রের সাথে তাঁর একটা অদ্ভুত মিল রয়েছে। দুজনেই মন দিয়েছিল সাম্রাজ্য বিস্তারে। শ্রীকান্ত নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সৌভাগ্যবান মানুষ বলে মনে করেন। যে বাবা-মা বছরে বিশ হাজার টাকা রোজগার করে, সমাজের বিভিন্নরকম কটূক্তি মেনে নিয়ে, নিজেদের মতো করে মানুষ করেছে তাদের একমাত্র সন্তানকে, তারাই পৃথিবীতে সবথেকে ধনী। নিজের অন্ধত্বকে জয় করে শ্রীকান্ত আজকে কোটিপতি। কিন্তু সে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে অন্য কারণে। সে মনে করে তাঁর বাবা-মা তাকে বেঁচে থাকার সুযোগ দিয়েছিল বলেই আজ সে এই জায়গায়, তাই পয়সা থাকলেই মানুষ ধনী হয়না, সুখে থাকতে পারাটাই আসল এই মনুষ্য জীবনে।
পিছিয়ে পড়েও সাফল্যের গল্প:
শ্রীকান্তের মতো অনেক গল্প আছে, যা আশার আলো দেখায়। কিন্তু আশাটা কিসের? অনেক টাকা রোজগার করার মতো ইচ্ছা নাকি মানসিক দৃঢ়তা। আসলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনেকেই বড় হয়, তারাও স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন কে বাস্তবে পরিণত করে, কিন্তু বাস্তবের গণ্ডিটা পার করতে পারে কজন আর সেটাই করে দেখিয়েছে এই ছেলে। আসলে জীবনের প্রতি একটা অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে গভীর অন্ধকার থেকেও আলো দেখতে সাহায্য করেছে। জন্মান্ধ হওয়াটা যেমন ওর জীবনের একটা দিক, আর একটা দিক হল সে গরীব ঘরে জন্মেছিল। স্কুলে পড়তে গেলে সবসময় তাকে পেছনের দিকে ঠেলে দিত তাঁর বন্ধুরা, কোনরকম খেলাধুলায় সে অংশগ্রহণ করতে পারত না, সবথেকে বড় কথা হল গ্রামের স্কুলে এটা ভাবার মতো কেউ ছিলনা, যে এসবের ফলে ছোট ছেলেটার মধ্যে কি টানাপড়েন চলছে। প্রতিপদে তাকে বঞ্চনার স্বীকার হতে হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বত্রই সে তাচ্ছিল্যের স্বীকার হয়েছে। দেশের ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সে। কিন্তু লড়াই থামায় নি সে। প্রসঙ্গত একজন বিখ্যাত লেখক বলেন যে ‘আমরা, আলোর পথের যোদ্ধারা যাবতীয় অন্যায়ের বিরোধিতা করতে পারি, কারণ আমরা সুযোগ পাই, যাবতীয় চক্রান্ত কে অস্বীকার করতে পারি কারণ বিপদের জন্য আমরা আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে পারি, কিন্তু তবুও অনেকসময় আমরা ভবিষ্যৎ কে বুঝতে ভুল করে ফেলি’।
আজকে শ্রীকান্তের নিজস্ব চারটে প্রোডাকশন ইউনিট আছে, কর্ণাটকের হাবলি, তেলেঙ্গানার নিযামাবাদে একটা করে আর হায়দ্রাবাদে দুটো। কিছুদিনের মধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রী সিটিতে সম্পূর্ণ সোলার নিয়ন্ত্রিত একটা নতুন প্ল্যান্ট তৈরি হতে চলেছে। এসব দেখেই ইনভেস্টর রবি মান্থা দেখা করেছিলেন শ্রীকান্তের সাথে বছর দুয়েক আগে। তাঁর সাথে কথা বলে, তাঁর ব্যবসায়িক বুদ্ধি, দূরদৃষ্টি দেখে সে বেশ অবাক হয়ে গেছিল, আর এসব থেকেই তিনি শ্রীকান্তের মেন্টর হতে চেয়েছেন, সাথে ইনভেস্ট করেছেন তাঁর কোম্পানিতে। তারা এরমধ্যেই প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঢেলেছে আর প্রায় ৯ কোটি টাকা উঠেও এসেছে। রবির ইচ্ছা আছে এর পর এই কোম্পানিকে ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং এর আওতায় নিয়ে যাওয়া। একটা প্রতিষ্ঠান, যেখানে ৭০ শতাংশ কর্মী কোনভাবে প্রতিবন্ধী আবার যাদের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় পঞ্চাশ কোটি।

বিচ্ছিন্নতা - বড় অভিশাপ:
ছোটবেলা থেকেই শ্রীকান্ত তাঁর বাবার সাথে মাঠে যেত চাষ করতে। কিন্তু চোখে না দেখতে পেলে, সে কাজ করবে কি করে? তাই তাঁর বাবা ঠিক করে যে ছেলেকে পড়াশুনা করান উচিত। প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার হেটে সে স্কুলে যেত কিন্তু সেখানেও একইরকম অবজ্ঞা, শেষ বেঞ্চে বসতে পাওয়া, শরীর শিক্ষার ক্লাসে সুযোগ না পাওয়া। আর এসব থেকেই তাঁর মধ্যে একটা জেদ আসে, জীবনে বড় হওয়ার জেদ। আসলে একাকীত্ব মানুষকে একটা অন্য জগতে ঠেলে দেয়। যখন তাঁর বাবা বুঝতে পারল যে ছেলে আসলে কিছুই শিখতে পারছেনা এভাবে, তখন সে ছেলেকে হায়দ্রাবাদের একটা স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করে দেন। আর সেখানেই যেন শ্রীকান্তের জীবনের দরজাটা উন্মুক্ত হয়ে যায় আরও ভালো করে। দাবা থেকে ক্রিকেট – সবেতেই সে তাঁর প্রতিভার পরিচয় দেয়। পড়াশুনাতে সে তাঁর ক্লাসে টপ করে, এমনকি এখানে থাকাকালীন সে আমাদের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের সাথে লিড ইন্ডিয়া প্রোজেক্টে কাজ করার সুযোগ পায়। কিন্তু এসব কিছুই কাজে আসেনি তাঁর জন্য যখন সে বোর্ডের পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ নাম্বার নিয়ে পাশ করার পরও বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পাচ্ছিল না। তখন তাঁর মনে হয়েছিল সে চোখে দেখতে না পেলেও আশেপাশের মানুষ আর সব অদ্ভুত নিয়ম তাকে জোর করে যেন বেশি অন্ধকারে পাঠিয়ে দিতে চায়। সমাজ যেন একটা বাঁধার মতো এখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র সে নয়। লড়াইটা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। বিজ্ঞান নিয়েই ভালো নাম্বার নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সে। কোর্ট অর্ডারে নিজের ঝুঁকি নিয়েই সে পড়তে চেয়েছিল আর সফলও হয়েছে সে।
আসলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য যেকোনো রকম ঝুঁকি নিতেই শ্রীকান্ত কখনো পিছপা হয়নি। যারা তাঁর বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিল, তাদের ভুল প্রমাণ করাই তাঁর লক্ষ্য ছিল। ৯৮ শতাংশ নাম্বার নিয়ে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হয়ে সে শুরু করে তাঁর পরবর্তী লড়াই। আই.আই.টি মুম্বাই বা এরকম আরও বড় বড় প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করে সে, কিন্তু সেখানেও একই বাঁধা, একই ধারণা সবার। শ্রীকান্ত আমাদের বলছিল ‘আমার কাছে একটা চিঠি আসে, সেখানে লেখা ছিল যেহেতু আমি অন্ধ, সেই জন্য কোনরকম প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আমি অংশগ্রহণ করতে পারবনা। আমিও ঠিক করি যদি আই.আই.টি আমাকে না চায়, তাহলে আমারও আই আই টি কে দরকার নেই। আসলে প্রত্যেকের তো লড়াই করার একটা সীমা থাকে’। সে ইন্টারনেটে তাঁর জন্য সুবিধাজনক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের খোঁজ খবর শুরু করে, তাঁর মতো করে সে গড়ে তুলবে তাঁর নিজের জীবন। সে আমেরিকার বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে আবেদন করতে থাকে আর মজার বিষয় হল যে ছেলে তাঁর নিজের দেশের কোন কলেজে ভর্তি হতে পারছিলনা, সে বিদেশের টপ চারটে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পায়। প্রথম অন্ধ ছাত্র হিসাবে ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় সে, যদিও সেখানে গিয়ে জীবন খুব সহজ ছিলনা তার। সেখানে গিয়ে নিজেকে আর সবার সাথে মানিয়ে নেওয়াটা একটা বড় ব্যাপার ছিল। কিন্তু সে লড়াইটা করতে জানে। সে জানে কিভাবে নিজের উপস্থিতিকে জানান দিতে হয় বিশ্বের দরবারে। তাই সফলতাও এসেছে তাঁর কাছে নিজের পথেই। কোর্স শেষ করার পর যখন লক্ষ্য টাকার চাকরি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন সে ফিরে আসে নিজের দেশে। আসলে দেশে যে তাঁর অনেক জবাব দেওয়ার ছিল। এখানে তাঁর প্রমাণ করার ছিল যে সে ফুরিয়ে যায়নি। শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতাঁর কারণে একজনকে কেন পিছিয়ে পড়তে হবে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার মুখে, ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কেন তাদের কোন মূল্য থাকবেনা, তারা কেন আর সবার মতো একটা ঠিকঠাক জীবনযাপন করতে পারবেনা। এই প্রশ্নগুলোই তাকে ফিরিয়ে এনেছে নিজের দেশে।
কর্পোরেট আমেরিকার সুবর্ণ সুযোগকে হেলায় ছেড়ে দিয়ে সে ফিরে আসে ভারতে, নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। সামাজিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সে একটা সাপোর্ট সার্ভিস তৈরি করে, প্রতিবন্ধী মানুষদের শিক্ষার আলো দেখিয়ে, সমাজের বুকে একটা স্থান করে দেওয়াই তাঁর মুল উদ্দেশ্য। ইওর স্টোরির সাথে কথা বলার সময় তিনি বলছিলেন ‘প্রায় তিন হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী কে লেখাপড়া শিখিয়েছে তাঁরা, কিন্তু এরপর কি হবে, এই মানুষগুলোর কাজের সুযোগ কোথায় আর তখন আমি এই ব্যবসা শুরু করি, যেখানে এখন প্রায় ১৫০ জন এরকম মানুষ মনের আনন্দে কাজ করে চলেছে’।
নাবিক যদি পারদর্শী হয় তাহলে দুরন্ত সমুদ্রেও নৌকা চালান খুব একটা কঠিন নয়, প্রয়োজন কিছুটা সমর্থন। শ্রীকান্তের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম। যে স্পেশাল স্কুলে সে পড়াশুনা করেছিল সেখানকার একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্বর্ণলতা, তাকে সাহায্য করেছিল প্রতিপদে। অনেকবছর ধরেই সে শ্রীকান্তের পরামর্শদাতা এবং পথ প্রদর্শক। এবার সে তাঁর প্রতিষ্ঠানে যোগ দিল নতুন রূপে, সে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বোলান্তের কর্মীদের উপযুক্ত করে তুলতে লাগল, তাদের জীবনের মানেটাই যেন বদলে যেতে লাগল দিনের পর দিন। ইনভেস্টর রবি বাবু বলছিলেন যে শ্রীকান্ত যেমন তাঁর বন্ধু তেমন সে অনুপ্রেরণাও বটে। প্রতিদিন সে শ্রীকান্তের থেকে নতুন কিছু শিখতে পারে, সে উপলব্ধি করেছে যে মানুষের মধ্যে যদি কিছু করার একটা প্রবল জেদ থাকে, তাহলে কোন বাঁধাই তাকে সেই লক্ষে পৌঁছানর থেকে আটকে রাখতে পারেনা।
যে ছেলেটা দুচোখে অন্ধকার নিয়ে জন্ম নিয়েছিল, পৃথিবীর আলো যার চোখে কোনদিন পৌঁছায়নি, সেই ছেলেই কিন্তু আজকে অনেক মানুষকে জীবনের আলো দেখাচ্ছে। অপরের প্রতি সমবেদনা দেখানো, একাকীত্ব দূর করে মানুষের পাশে থাকতে পারার মন্ত্র নিয়েই জীবনে আরও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে শ্রীকান্ত বোলা
Unknown
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, কোনও কিছুই ফ্যালনা নয়। এই কথাটা আমরা বহুবার শুনেছি। নেহাতই হেলাফেলার জিনিস। পুকুরের কচুরিপানা। তা দিয়েও যে নানান রকমারি জিনিস তৈরি করা যায় কেই বা জানত। অসমের পুষ্পি ব্রহ্ম সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কচুরিপানার স্ট্র শুকিয়ে ব্যাগ মাদুর পাটি বানিয়ে কোঁকড়াঝাড়কে রীতিমত স্বাবলম্বী করে তুলেছেন।
নিজের এই কাজকে শুধু অসমের ভৌগলিক সীমানায় আটকে রাখেননি।
কচুরিপানা দিয়ে তৈরি হাতব্যাগ বা সাইড ব্যাগের কালেকশন নিয়ে হাজির হয়েছেন কলকাতায়। ঘুরছেন দেশের অন্যপ্রান্তেও। মেলায় মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুষ্পি। তাঁর উদ্যোগে ভর করে স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন কোঁকড়াঝাড়ের কয়েকশ মানুষ।
কলকাতায় ট্রেড ফেয়ারের স্টল সামলাবার ফাঁকে আমাদের জানালেন তার লড়াই এর কাহিনি। বললেন, কোঁকড়াঝড়ের গ্রামেই নিজে ছোটখাটো হাতের কাজ করে হাত খরচ জোগার করতেন। আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ার পুষ্পি। ছোটোবেলা থেকেই উদ্যোগী মেয়ে। একের পর একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। শিক্ষক বাবা আর সংসারের দায়িত্ব সামলানো মাও হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। মেয়ের উদ্যোম দেখে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন। মেখলা, চাদর আর বাঁশের তৈরি ট্র্যাডিশনাল জিনিসের ব্যবসা করেছেন পুষ্পি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পণ করেছেন যেন। কিন্তু সেসবের বাজার বছরভর চাঙ্গা থাকত না। তাই বলছিলেন, "আমাদের ওখানে প্রচুর পরিবার ওই একই কাজ করতেন। খালি ভাবতাম নতুন কিছু যদি করা যায়, তবে তাহলে হয়তো বাজারে মোটামুটি সারা বছর চাহিদা থাকবে। এটা সেটা খুঁজছিলাম বছর দুয়েক আগে সুযোগ এল। নর্থ ইস্টার্ন ডেভেলপমেন্ট ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশন (NEDFI) এর ক্যাম্প বসেছিল, সেখানেই খোঁজ পেলাম। থাইল্যান্ডের একটি হস্তশিল্পকে অসমে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করার পরিকল্পনা করছিলেন ওঁরা। সেই ক্যাম্পেই আমাদের এলাকার কচুরিপানাকে রি-সাইকেল করে একটি নতুন ধরনের হাতের কাজের ট্রেনিং নিলাম। তারপর ট্রেনিং শেষে নিজে কয়েকটা কচুরিপানার পাতা দিয়ে মহিলাদের হাত ব্যাগ তৈরি করালাম। আমার তৈরি মেখলা কিনতে আসা মহিলারাই এবার কচুরিপানার ব্যাগ পেয়ে দারুণ খুশি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সব ব্যাগ বিক্রি হয়ে গেল। বুঝলাম এতদিন ধরে যে জিনিসটা খুঁজছিলাম তার হদিশ পেয়ে গেছি।"
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অসমের বেশ কিছু অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা মন্দার মধ্যে দিয়ে চলছিল। পর্যটনেও তার প্রভাব পড়ে। সেই সব প্রভাব কাটিয়ে ধীরে ধীরে আবার নিজের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে কোকড়াঝাড়। সে সুযোগটাই কাজে লাগালেন পুষ্পি।
জমানো পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগিয়ে দিলেন নতুন কাজে। এলাকার কর্মহীন মহিলাদের নিজেই প্রশিক্ষণ দিলেন। কাঁচামালের যোগান এলাকার পুকুর থেকেই তুলে নিলেন। তাঁদের শেখালেন কিভাবে সঠিক জলকুম্ভি বা কচুরিপানা বাছাই করতে হয়। তারপর সেই আড়াই বা তিন ফুট লম্বা কচুরিপানা শুকিয়ে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করে হাতের কাজের উপযোগী করে তোলা ছিল তার বাঁ হাতের খেল। দক্ষতার সঙ্গে বুনে তৈরি হতে লাগল সাইড ব্যাগ, হ্যান্ড-ব্যাগ, ঘর সাজানোর নানা উপকরণ।
তার নিজের কথায়," আমাদের এলাকায় বেশ কিছু মহিলা ট্রেনিং নিলেন, তারপর ২০১৩ এর শেষের দিকে আমি কোঁকড়াঝারে আমার দোকানে নতুন কয়েকটা প্রোডাক্ট তুললাম। স্থানীয় লোকজন আর পর্যটকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হল সেগুলো। কিন্তু ততদিনে আমার টিমে প্রায় ৩০ জন সদস্য হয়ে গিয়েছে। চিন্তা ছিল বাজারটা কি করে আরও বড় করা যায়। শেষমেশ আগের মত শুধু কোঁকড়াঝাড়েই না আটকে রয়ে যাই। অন্য লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম ভিন রাজ্যে বাজার না ধরতে পারলে মুস্কিল। অন্য রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেলায় অংশগ্রহণ করা শুরু করলাম। গোয়া,বোম্বে,দিল্লি ও কলকাতার বিভিন্ন মেলায় যোগদান করলাম। বিভিন্ন রাজ্যের ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছি। ক্রেতাদের কাছ থেকে তাদের চাহিদা মাফিক পণ্যের ডিজাইনে নানা পরিবর্তন করি। অনেক কিছু শিখলাম। কয়েকজন পাইকারি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ হল।ভিন রাজ্যে মাল পাঠানো শুরু করলাম।ব্যাবসায় অনেক বদল এল। এখন আর আমার গুয়াহাটি ও কোঁকড়াঝাড়ের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের ৪০ জন সদস্যের নিয়মিত কাজের যোগানের জন্য চিন্তা করতে হয় না।উল্টে সময়মত অর্ডার পাওয়া প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারলাম কিনা তার চিন্তাই ভাবায়। জলে ভাসা কচুরিপানা যে আমায় একটা শক্ত মাটিতে দাঁড় করাবে তা কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। সত্যি খুব অবাক লাগে, ভালও লাগে।"
কোঁকড়াঝাড়ে পুষ্পির সাই ইন্ডাস্ট্রিজ এখন বেশ পরিচিত নাম। পুষ্পির কচুরিপানার তৈরি হাতব্যাগ ঝোলাব্যাগ কলেজপড়ুয়াদের কাছে রীতিমত হটকেক। সময়ের সঙ্গে বদল এসেছে অনেক। কমবেশী চল্লিশটি পরিবার, শদুয়েক মানুষ এখন কচুরিপানার পণ্য বানিয়ে বেঁচে আছেন। পুষ্পির দেখাদেখি আরও অনেকেই এই কাজের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে উৎসাহী
Unknown
Technology startup investments seem to follow a wave, especially when you look at it according to sectors. Be it Silicon Valley or any part of the globe, there is a pattern that is followed.

There might be a lot of startups in one space, but when one investor decides to make a move, the others also move in quick succession. In India, we’ve seen this with e-commerce, cab aggregators and food delivery startups. There have been many more such pockets as well, and in this post, we look at five interesting areas in the consumer space that seem to be garnering a lot of interest right now.


Self-drive car rentals


These startups provide cars for rent; and users need to drive on their own. This service is typically used when people are going out on weekend getaways or day trips requiring a lot of travel. It also caters to the segment of people who don’t own a car but enjoy the experience of having one; and this is a big value proposition in India. Companies like Zoomcar, JustRide, Revv, Voler Cars and Myles from Carzonrent are the names that have emerged till now.  The concept of self-drive car rentals is already very popular in countries like the US and China where fairly large companies like Hertz, Zipcar, eHi, etc., have been created.Greg Moran, Co-founder, ZoomcarTarun Davda, Director at Matrix Partners says, “Local transport is a very large market and is dominated by on-demand cab companies like Ola and Uber because of the ease of booking, affordable pricing and the hassle-free experience they offer.” He also points out the challenges that exist because of an asset-heavy model:

a) Ensuring utilization of the fleet during weekdays, not just weekends, which will result in better unit economics.
b) Maintaining the quality of the fleet over time.

Weekend trips seem to be the dominant use-case for self-drive rentals right now, and some of these companies see greater than 90 per cent utilization on weekends. For typical weekday use-cases like commute to the office, going to the cinema, a visit to the mall, business meetings, etc., Indian consumers still show a preference for cabs. This is because they don't want to deal with parking issues, or finding directions, etc., which are still huge pain-points. Also, given the relatively lower labour costs in India, booking a cab isn’t much more expensive than booking a self-drive car.

On the whole, the self-drive car rental category is large and interesting, and has a lot of potential in India.
Bus aggregators

Commuters using rBusAfter the mighty success of cab aggregators like Uber and Ola, we have bus aggregators. These are service companies that are trying to bring all the intracity buses on to a single platform, and users can book via the website or an app. In India, we have players like Shuttl, ZipGo, rBus and Cityflo. All these companies have raised a seed round and follow the footsteps of companies like Bridj, Chariot, Leap, etc. “Bus aggregation is a very large opportunity with a potential market of 5-10 thousand daily bus trips in each of the larger cities in India,” says Tarun. The key use-case that most startups are catering to today is around office commute. However, as these companies scale, they will be able to cater to several of the daily use-cases. Tarun also points out the numerous challenges that exist for these companies:

a) Availability of quality supply at scale – this doesn't exist today and will need to be created; just like Ola and Uber did for cabs.
b) Route planning - unlike cab companies, startups in this space will need to decide which routes to pick, how many buses to run on each route and at what time, etc.
c) Utilization and profitability of each bus trip – how many passengers are needed to breakeven on a particular trip? How do you ensure predictability of demand?
d) Competition with cab-aggregators like Ola which already have the user base and are planning to offer bus rides as an additional category.
e) Regulatory concerns on running a private bus-service.

Siddharth Talwar, VC at Lightbox Ventures, raises similar concerns. “I don’t see why a cab aggregator wouldn’t enter this space. It is an interesting space, though it requires a lot of capital to build such a business at scale.” However, many of the startups are beginning on this road with a vision of simplifying the commute for the urban Indian.
Wellness and beauty marketplaces


Marketplaces hold the promise of the online world - the perfect bridge to the offline world. There are a lot of startups building supply and demand for a particular segment and the model has become almost an obsession. Wellness and beauty is one such area. VanityCube, Belita, Vyomo, Hyve, Getlook, Bulbul, BigStylist, Stylish, Styl etc., are all startups in the metros of India that are trying to make it easy for users to discover spas and salons around them.

A 2012 Price Waterhouse Coopers/FICCI report said the beauty care market is worth between Rs 230 and Rs 245 billion and is growing at 20 to 25 percent annually (source). This is the market that all these startups are chasing. Think of them as a Zomato for the beauty and wellness industry. There are various models involved: tying up with big well known brands like L’Oreal or having independent stylists on board or having a trained team and creating a brand. Hybrids of these are, of course, possible and the vertical also has scope for extension into other areas. Globally, Rocket Internet backed Vaniday recently raised a $15 million round.
On-demand logistics services


If you’ve travelled on Indian roads and highways, you know how many trucks there are on the road. Thinking of getting cabs and buses on a platform is a problem one can think of solving but managing trucks is audacious. “This is a very large and extremely fragmented market. It takes a lot to start figuring out and rationalizing this space and I’m glad there are entrepreneurs who are already on to the problem. I am very excited to see how things progress here,” says Sid Talwar.

Meet Shippr, Blowhorn, The Porter, The Karrier, GoGo Trucks, Trukky, Moovo and ReturnTrucks. These companies are aggregating intra city trucks to help consumers with intra city logistics. Be it relocating, supplying construction material, event management material or anything else, users or businesses can book and track mini trucks available around them. Then there are the likes of TruckSuvidha and TruckMandi which operate more in the B2B space. This domestic market is pegged to be at INR 6 lakh crore; and technology has just scratched the surface when it comes to bringing about a disruption in the space.
On-demand physical storage


Think of Dropbox for physical spaces. Tackling a major problem of urban places, on-demand physical storage service provides let users store their stuff in a warehouse. Professionally managed with a monthly subscription fee, users can rent out physical spaces owned by the companies where their stuff can be kept. The company has a fleet which will retrieve the things when needed.

In India, Boxmyspace and StoreMore are two companies starting out from Mumbai and NCR respectively. “This is a huge pain point in the cities. The industry has a few obstacles in terms of getting a customer comfortable with the idea of having a remote space on rent but the solution certainly has potential,” says Siddharth.

Globally, Boxbee has raised $6 million, MakeSpace has raised $8 million, and there are similar services coming up in different geographies across the world.

Most of these 5 sectors are still in very early stages in terms of technology coming in to change the way things function. Some are large enough markets to sustain many companies in the space while some are small and will see consolidation down the road. What are your thoughts on these sectors?